আগেই বলা হয়েছে উইন্ডোজ ৮ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর নতুন যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ, তাই প্রথম পদক্ষেপ পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু উইন্ডোজ ৮ প্রমাণ করেছে সে তার প্রথম পদক্ষেপটি ফেলেছিল প্রায় ৮০% সঠিক। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকে সবসময়ই ১০০% পাওয়ার, অন্তত মাইক্রোসফটের মত একটা কম্পানির নিকট আমাদের প্রত্যাশার পারদ একটু চড়াই থাকে।
প্রতি উইন্ডোজের রিলিজের পরই মাইক্রোসফট গ্রাহকদের চাওয়া ও অসুবিধার তথ্য সংগ্রহ করে মাইক্রোসফট। সেই ফিচার গুলো যোগ আর অসুবিধাগুলোর বিয়োগ ঘটে সাধারণত পরবর্তী উইন্ডোজ রিলিজে।তাই উইন্ডোজ ৮ এর রিলিজের পরই গ্রাহকরা মাইক্রোসফটের নিকট জানায় তাদের প্রত্যাশার কথা। সে সকল প্রত্যাশা আর মাইক্রোসফটের ভবিষ্যত পরিকল্পনার মিশেলেই এসে গেল উইন্ডোজ ৮.১।

চলুন তাহলে আর দেরী না করে ঝাঁপ দেই রিভিউ এর দুনিয়ায় এবং জেনে নেই কি নতুনত্ব আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে !
ইন্সটলেশন এবং ওওবিইঃ
উইন্ডোজ ৮.১ এ ইন্সটলেশন ইন্টারফেস পুরোপুরি উইন্ডোজ ৮ এর মতই আছে। আমি প্রথমবার বেশ একটা ধাক্কাই খেয়েছিলাম যখন দেখলাম বুট লোগো পুরোনো এবং ইন্সটলার উইন্ডো তে উইন্ডোজ ৮ এর লোগো! পরে অবশ্য লাইসেন্স এ ৮.১ দেখে নিশ্চিত হয়েছিলাম আমি ভুলে উইন্ডোজ ৮ বুট করিনি।
স্টার্টস্ক্রিনঃ
প্রথম দেখায় যে জিনিসটা আপনার চোখে পড়বে তা হল স্টার্ট স্ক্রিনের আরো নতুন নতুন ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কালার অপশন। এখন পিসি সেটিংস এ না গিয়েই আপনি চার্ম বারের সাহায্যে খুব সহজেই ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করতে পারবেন।


একটি নতুন বাটন যুক্ত হয়েছে স্টার্টস্ক্রিণের বাম পাশের নিচের দিকে যার সাহায্যে আপনি সহজেই All Apps পেজে যেতে পারবেন। All Apps পেজে আপনার পিসিতে ইন্সটলকৃত সকল মর্ডার্ণ এবং ডেস্কটপ অ্যাপস দেখতে পারবেন। তাই টাইল স্টার্টস্ক্রিণে যুক্ত না হলেও অ্যাপগুলো আপনি অ্যাক্সেস করতে পারবেন সহজেই।
ডেস্কটপঃ
মাইক্রোসফট গত কয়েক উইন্ডোজ রিলিজ ধরে ডেস্কটপ ইন্টারফেস পরিবর্তনে এক প্রকার অনীহাই দেখাচ্ছে। এর ব্যতীক্রম এবার ঘটেনি। তাই প্রথম বুটের পর আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে সেই ভিস্তা যুগের ডেস্কটপ ইন্টারফেসই।ডিফল্ট ওয়ালপেপার হিসেবে আছে একটি হলুদ রাঙ্গা ওয়ালপেপার। এক্ষেত্রেও উইন্ডোজ ৮ এর ডিফল্ট ওয়ালপেপারে যেমন অনেক কিছুই লুকায়িত ছিল, উইন্ডোজ ৮.১ এ তেমন কিছু নেই।

স্টার্টবাটনের মাধ্যমে স্টার্টমেনুর আগমন না ঘটলেও এতে রাইট ক্লিক করলে নতুন একটি মেনু আসবে যাতে রয়েছে দরকারী অনেক শর্টকাট। উইন্ডোজ ৮ এও এটি রয়েছে কিন্তু শাট ডাউন মেনুটি নতুন সংযোজন। এছাড়া Windows Key + X চেপেও মেনুটি অ্যাক্সেস করা যায়।
ডেস্কটপ ফাইল ম্যানেজারঃ
উইন্ডোজের অন্যতম বড় আকর্ষণীয় দিক ফাইল ম্যানেজার বা এক্সপ্লোরার। উইন্ডোজ ৮ এর থেকে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি এই দিকটায়। পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে বড় এর নাম, এখন এক্সপ্লোরার পরিচিতি পাবে This PC নামে। নামেই বুঝা যাচ্ছে আপনার পিসির প্রায় সবকিছুই পরিচালনা করতে পারবেন এর মাধ্যমে। ডিস্ক ড্রাইভ থেকে শুরু করে স্কাই ড্রাইভ সবই ম্যানেজ করতে পারবেন এখান থেকে।এখানেও রয়েছে আরেকটি প্রত্যাবর্তন, এখানে আপনার পার্সনাল ফোল্ডার যেমন ডকুমেন্টস, ডাউনলোডস ইত্যাদি অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এই ফিচারটি উইন্ডোজ এক্সপি তে থাকলেও পরবর্তি রিলিজ গুলোতে ছিল না। অবশ্য কার যদি পছন্দ না হলে রিমুভও করতে পারবেন সহজেই।

সেটিংসঃ
সময়ের সাথে মাইক্রোসফট চাচ্ছে উইন্ডোজের সব কিছুই মর্ডার্ন ইন্টারফেসের আওতায় আনতে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন আপনি পিসি সেটিংস থেকেই আরো ডিপ লেভেল সেটিংসও দেখতে ও পরিবর্তন করতে পারবেন।
স্টোরঃ
বর্তমানে উইন্ডোজের প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু ম্যাক কিংবা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমেই সীমাবদ্ধ নয়, উইন্ডোজ ৮ এর রিলিজের পর থেকে মাইক্রোসফট ট্যাবলেট বাজারকে তার হাতের মুঠোয় নেয়ার চেষ্টা করছে। একাজে মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় বাধা অ্যাপল এর আইওএস এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমান ট্যাবলেট বাজারের প্রায় পুরোটাই এই দুই জায়ান্টের দখলে এবং এই দখলদারীত্বের যেটি সবচেয়ে বড় নিয়ামক তা হচ্ছে অ্যাপস।অপারেটিং সিস্টেমে যত বেশী অ্যাপস তার গ্রাহকপ্রিয়তা তত বেশী, বর্তমান বাজারে এরকম চলই লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই দুই ঘোড়ার দৌরে মাইক্রোসফট তৃতীয় ঘোড়া হিসেবে জায়গা করে নেয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ডেভেলপারদের। কারণ তারাই পারে কোয়ালিটি অ্যাপস তৈরি করে গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে। তাই উইন্ডোজ ৮.১ এ ডেভেলপারদের জন্য বাড়তি সুবিধার পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্যও এসেছে অনেক পরিবর্তন।
উইন্ডোজ ৮.১ এ স্টোরের ইন্টারফেসে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ইন্টারফেসটি এখন আগের চাইতে অনেক গোছানো এবং আকর্ষণীয়।


ইউনিফাইড সার্চঃ
উইন্ডোজ ৮.১ এর আরেকটি দারুণ ফিচার ইউনিফাইড সার্চ। অর্থাৎ এখন থেকে উইন্ডোজ ৮.১ এর চার্মবার থেকে একাধারে আপনি কম্পিউটারের সকল অ্যাপ, ফাইল ও ওয়েব সার্চ করতে পারবেন। যারা অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করেছেন তারা গুগল নাউ এর মিল পাবেন নতুন এই ফিচারটির সাথে।

উন্নত মাল্টিটাস্কিং:
উইন্ডোজ ৮.১ এসেছে আরো উন্নত মাল্টিটাস্কিং সুবিধা নিয়ে। নতুন স্ন্যাপ এর মাধ্যমে আপনি একত্রে একসঙ্গে চারটি পর্যন্ত অ্যাপ স্ন্যাপ করতে পারবেন অর্থাৎ পাশাপাশি চালাতে পারবেন।
ভাষা ও বাংলাঃ
মাইক্রোসফট মাল্টিল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্টকে উইন্ডোজ ৮ এ বেশ গুরুত্বের সাথেই নিয়েছিল যার ধারা এখনো অব্যাহত আছে। উইন্ডোজ ৮.১ অনেক গুলো নতুন ভাষার সাপোর্ট যুক্ত করেছে।

মিউজিক ও ভিডিওঃ
উইন্ডোজ ৮.১ এর মর্ডার্ন মিউজিক প্লেয়ারে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এটি এখন থেকে পরিচিতি পাবে এক্সবক্স মিউজিক নামে। নামের সাথে এর ইন্টারফেসেও এসেছে অনেক পরিবর্তন।



সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং মেসেঞ্জিং:
বর্তমান সময়টাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর। তাই এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই উইন্ডোজ ৮.১ ও। উইন্ডোজ ৮.১ এ প্রিইন্সটলড হিসেবে রয়েছে Peoples অ্যাপ যার মাধ্যমে আপনি টুইটার, ফেসবুকের মত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতে যুক্ত থাকতে পারবেন।এছাড়া পিছিয়ে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর অফিসিয়াল অ্যাপ সমুহও। উইন্ডোজ ৮.১ এর রিলিজের দিন বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ রিলিজ পেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছে ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যাপটি। ইউনিফাইড সার্চ, স্ন্যাপ ভিউ এর সকল সুবিধা নিয়ে তৈরি করা অ্যাপটি স্টোরে বিনামুল্যে পাওয়া যাচ্ছে।


ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারঃ
উইন্ডোজ ৮.১ এর সাথে প্রি ইন্সটলড রয়েছে মাইক্রোসফটের সর্বশেষ ইন্টারনেট ব্রাউজার, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১১; বর্তমানে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার তার বাজারের বেশ বড় অংশই হারিয়েছে ক্রোম ও ফায়ারফক্সের কাছে। তাই মাইক্রোসফট বেশ জোরেশোরেই নেমেছে হারানো রাজত্ব উদ্ধার করতে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১১ এর মেট্রো ইন্টারফেসের কিছু পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, এখন আপনি সহজেই অ্যাড্রেসবার কে স্থায়ীভাবে ভিসিবল করে রাখতে পারবেন। আরো কিছু ছোট পরিবর্তনের সাথে ইঞ্জিনের ব্যাপক পরিবর্তন পার্ফর্মেন্স অনেকাংশেই বৃদ্ধি করেছে।
হেল্প এবং টিপসঃ
উইন্ডোজ ৮ এ অনেক নতুন জেটসার ও নতুন কন্ট্রোল নিয়ে আসে। বেশিরভাগ নতুন ইউজারদের এসকল নতুন ফিচার গুলোর সাথে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে। তাই নতুন ফিচার গুলোর সাথে ইউজারদের পরিচিত করতেই উইন্ডোজ ৮.১ দেয়া আছে Help+Tips নামে একটি অ্যাপ। এর মাধ্যমে সহজেই একজন ইউজার উইন্ডোজ ৮.১ এর নতুন ফিচার গুলোর সাথে পরিচিত হতে পারবেন।
কিভাবে আপগ্রেড করবেনঃ
যারা উইন্ডোজ ৮ ব্যবহার করছেন তারা বিনামুল্যে উইন্ডোজ ৮.১ এ আপগ্রেড করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে উইন্ডোজ স্টোর এর মাধ্যমে আপগ্রেড করতে হবে। এছাড়া আপনি যদি DreamSpark বা MSDN/TECHNET এর সদস্য হয়ে থাকেন, তবে আপনি ISO ইমেজ ডাউনলোড করেও আপগ্রেড করতে পারেন বা ক্লিন ইন্সটল করতে পারেন।এখন প্রশ্ন হল, আপনি কি উইন্ডোজ ৮.১ আপগ্রেড করবেন?
আপনি যদি উইন্ডোজ ৮ এর ইউজার হয়ে থাকেন তবে উত্তর হবে, হ্যাঁ, অবশ্যই। উইন্ডোজ ৮ এর থেকে ৮.১ এ আপগ্রেড না করার কোনো উপাদান ই উপস্থিত নেই ৮.১ এ। কারণ উইন্ডোজ ৮ থেকে ৮.১ সব দিক থেকেই অনেক উন্নত, আরো পরিণত।আপনি যদি উইন্ডোজ ৭ এ থাকেন, উইন্ডোজ ৮ স্কিপ করে, আমি বলব এবার সময় হয়েছে নতুন কিছু ট্রাই করার। উইন্ডোজ ৮ এর সম্পর্কে যেসকল দুর্নাম আপনি হয়ত শুনেছেন তার অনেকাংশই ৮.১ এ অনুপস্থিত। তাই আমি মনে করি না ৮.১ আপনার কর্মদক্ষতাকে বাড়ানো ছাড়া কমিয়ে দেবে। উইন্ডোজ এক্সপি ইউজারদের প্রতি কিছু বলার মত ভাষা অবশ্য আমার অভিধানে নেই।
অনেকেই হয়ত এতক্ষন পড়ে বুঝে গেছেন উইন্ডোজ এর নতুন আপগ্রেড সাইকেল এর জন্যেই পোস্টের এ টাইটেল। ট্যাবলেট মার্কেটের সাথে তাল মেলাতে এবং উইন্ডোজ ৮.১ এর সমস্যা গুলো শোধরাতে হয়ত আগামী একবছর পরেই আমরা নতুন আরেকটি আপগ্রেড পাব। ফলে দ্রুত আপডেটের কারণে উইন্ডোজ হয়ে উঠবে আরো আকর্ষণীয়।
সবমিলিয়ে বলা যায় উইন্ডোজ ৮.১ বর্তমান বাজারের ডেস্কটপ ও ট্যাবলেট ওএস গুলোর মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানেই আছে। উইন্ডোজ ৮.১ নিয়ে মাইক্রোসফট প্রস্তত আবার বাজারকে মাত করার জন্য।
Oh! what a nice sharing !!!! I have learned lot about windows 8....
ReplyDelete