ব্যাটম্যান।
দ্য গ্রেটেস্ট সুপারহিরো অফ অল টাইম।
ব্যাটম্যান ডি.সি. কমিক্স প্রকাশিত একটি কাল্পনিক চরিত্র, যার সৃষ্টি সুপারম্যানের সাফল্যের একটি প্রতিক্রিয়া হিসাবে।
চিত্রশিল্পী বব কেইন আর লেখক বিল ফিঙ্গার হলেন ব্যাটম্যানের জগদীশ্বর
এবং ব্যাটম্যানের প্রথম অ্যাপেয়ারেন্স ১৯৩৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত
ডিটেকটিভ কমিকস # ২৭-এ।
ব্যাটম্যানের কথা বলতে গিয়ে বব কেইন বলেছিলেন, “ব্যাটম্যান
ফ্যানোমেনা আমাকে এক বিশাল পরিতৃপ্তি দেয় যখন উপলব্ধি করি ব্যাটম্যানের
কারনে সারাবিশ্বে আমার অগণিত ভক্ত আছে। এক চমৎকার আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টি
আমার হৃদয় স্পর্শ করে যায় যখন দেখি আমি এমন এক নায়ক তৈরি করেছি যে বিশ্বের
বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রভাবিত করে। এমনটি চিন্তা করতেই নিজেকে সৌভাগ্যবান
মনে হয় যে, আমি এমন সুপারহিরোর প্রণেতা যে আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে
পৌঁছতে পারে।”
কেইনকে ব্যাটম্যান স্রষ্টা বলে মনে করা হলেও, ফিঙ্গারেরও এর পিছনে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিঙ্গারই ব্যাটম্যানের আউটফিটের
মূলরুপ দেন। অনেকেরই এ সম্পর্কে ধারণা নেই যে, কেইন প্রদত্ত ব্যাটম্যান
প্রতিকৃত ছিল বাঁদুরের ডানা বিশিষ্ট লাল পরিচ্ছদ এবং সাথে একটি ছোট ডমিনো
মাস্ক, পরে রবিনকে যেটা পরানো হয় অনেকটা তার মত।
পরে, ফিঙ্গারের পরামর্শেই ব্যাটম্যানকে সূচ্যগ্র বাদুরকর্ণ বিশিষ্ট
অন্তরীপের সঙ্গে একটি কালো আলখিল্লা পরানো হয় এবং এতে আরো চিত্তাকর্ষক
আবির্ভাব দিতে তিনি ব্যাটম্যানকে একটি গাঢ় কৃষ্ণাভ পরিচ্ছদ দেয়ার জন্যে
নির্দেশনা দেন।
সুদীর্ঘ গল্পটিকে সংক্ষিপ্ত করে বলতে গেলে বলতে হবে ব্যাটম্যান চরিত্র
মূলত ‘ওয়েইন’ নামের একটি সমৃদ্ধ পরিবারের বালক ব্রুস ওয়েইনকে কেন্দ্র করেই
যার চোখের সামনে তার মা-বাবা প্রাণ হারায় এক ছিনতাইকারীর কবলে পরে।
চোখের সামনে মা-বাবার মৃত্যু তার ভেতরে এমন একটা কিছু সৃষ্টি করে যার জন্য
সে তার বাঁদুরভীতি জয় করে বাঁদুর কেই প্রতীক বেছে নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলে
ব্যাটম্যান রূপে।
আগে ব্যাটম্যানের কাহিনীগুলো ছিল অনেকটা পাল্প ম্যাগাজিনের হিরো যরো নামক
এক নিষ্ঠুর ভিজিল্যান্টের মত, অপরাধীকে খুন করতে যে মোটেও দ্বিধাবোধ করতো
না ।
পরে এক ধারালো বৈসাদৃশ্যের সাথে ব্যাটম্যান চরিত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
ব্যাটম্যান, আমেরিকান ধনকুবের ফুর্তিবাজ, শিল্পপতি, লোকহিতৈষী ব্রুস ওয়েইনের দ্বিতীয় স্বত্ত্বা।
ব্রুস ওয়েইন ব্যক্তিত্ব ছিল অনেকটা ডন দিয়েগো দে লা ভেগার মত।
আরও কয়েকটি চরিত্র যা ব্যাটম্যানকে প্রভাবিত করে তা হল, ডক স্যাভেজ, শার্লক হোমস এবং শ্যাডো।
১৯৫০-পর্যন্ত ব্যাটম্যান এর জনপ্রিয়তা অটল ছিল, বিশেষ করে শিশুদের কাছে ব্যাটম্যান হয়ে ওঠে এক বিশাল তারকা।
এই দশকেই ব্যাটম্যান তার জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে যখন এতে উদ্ভট বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, এলিয়েন সমৃদ্ধ করা হয়।
১৯৬৪ সালের দিকে ব্যাটম্যান তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করে যখন ডি.সি. কমিক্স সম্পাদক জুলিয়াস শোয়ার্জ কমিক্সটির ভার নেন।
শোয়ার্জ সিরিজটিকে ফিরিয়ে আনেন এর পূর্বের গোয়েন্দা শিকড়ে।
এরই চিন্তাভাবনা থেকে ১৯৬৬ এর দিকে অ্যাডাম ওয়েস্ট এবং বার্ট অভিনিত “ব্যাটম্যান” টিভি সিরিজ নির্মাণ করা হয়।
আর ধন্যবাদ দিতে হবে ডেনিস ও’নীল এবং চিত্রশিল্পী নীল অ্যাডামসকে, ১৯৭০ এর
দিকে ব্যাটম্যানকে তার দৃঢ়চরিত্রের দ্য ডার্ক এভেঞ্জার হিসেবে আখ্যায়িত
করে নতুন করে ব্যাটম্যান পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে। যার ফলে অনেকদিন পর্যন্ত
ব্যাটম্যন তার কমিক ভক্তদের মাঝে বেঁচে ছিল।
পরে ১৯৮৬ সালে ফ্রাঙ্ক মিলারের ডার্ক নাইট রিটার্নসের মাধ্যমে ব্যাটম্যান
গল্পগুলো আরও গভীর হয়। এতে দেখা যায় বয়স্ক এক ব্রুস ওয়েইনকে যে অপরাধীদের
কবলে পরা গথাম সিটিকে রক্ষা করতে রিটায়ারমেন্ট থেকে ফিরে এসেছে।
এই কাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা ১৯৮৯ সালে
“ব্যাটম্যান”এর চলচ্চিত্র সংস্করণ করেন যার অভিনয়ে ছিলেন, মাইকেল কিটন ।
২০০৫ সালে ক্রিস্টোফার নোলান নির্দেশিত “ব্যাটম্যান বিগিন্স” এর পূর্ব
পর্যন্ত, ১৯৮৯ সালের ব্যাটম্যানের স্যিকুয়েল হিসেবে ১৯৯২ সালে মাইকেল
কিটনকে নিয়ে টিম বার্টন নির্মাণ করেন “ব্যাটম্যান রিটার্ন্স”,
তারই কিছু পরে ১৯৯৫ সালে টিম বার্টনের প্রয়োজনা জোয়েল শুমেখারের
পরিচালনায় নির্মিত হয় “ব্যাটম্যান ফরেভার” এবং ১৯৯৭ সালে পরিচালক জোয়েল
শুমেখার জর্জ ক্লুনি, উমা থুরম্যান, ক্রিস ও’ডন্যেল এবং আর্নল্ড
সুয়ার্জনেগারকে নিয়ে নির্মাণ করেন “ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন”।
পরবর্তিতে ২০০৫ সালে ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালনা ও নির্দেশনায় নির্মিত হয়
ব্যাটম্যান বিগিন্স যার স্যিকুয়েল হিসেবে ২০০৮ সালে নির্মিত হয় ‘দ্য ডার্ক
নাইট’ এবং ২০১২ সালের জুলাইয়ে মুক্তি প্রায় নোলান পরিচালিত ব্যাটম্যানের
শেষ স্যিকুয়েল “দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস”।
এ যাবতকাল পর্যন্ত ব্যাটম্যান নিয়ে পরিচালিত চলচ্চিত্র সমূহ এবং প্রকাশকালঃ
ব্যাটম্যান – ৩০ জুলাই ১৯৬৬
ব্যাটম্যান – ২৩ জুন ১৯৮৯
ব্যাটম্যান রিটার্ন্স – ১৯ জুলাই ১৯৯২
ব্যাটম্যান ফরেভার – ৯ জুন ১৯৯৫
ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন -১২ জুন ১৯৯৭
ব্যাটম্যান বিগিন্স – ১০ জুন ২০০৮
দ্য ডার্ক নাইট – ১৪ জুলাই ২০০৮
দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস – ১৬ জুলাই ২০১২
যাই হোক মূল আলোচনাটি ক্রিস্টোফার নোলানের দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজিকে ঘিরেই।
এবারে
ব্যাটম্যান বিগিন্স,
ডিসি কমিকস চরিত্র ব্যাটম্যান উপর ভিত্তি করে নির্মিত ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত একটি ব্রিটিশ-আমেরিকান সুপারহিরো ফিল্ম।
IMDb Rating: 8.3 (Top 250 #107)
Rotten Tomatoes: 84% (Audience: 94% )
আমার রেটিংঃ ৪.৫/৫
সারসংক্ষেপঃ খেলার সাথীর সাথে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে ব্রুস নামের ছেলেটি পড়ে যায় পুরোনো কুয়ার ভেতর।
গহ্বর থেকে তাকে তাড়া করলো এক ঝাক বাদুড়, প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলো সেদিন ব্রুস।
সেদিন রাতেই অপেরা থেকে ফেরার সময় চিল নামের গুণ্ডার গুলিতে খুন হয় তার বাবা-মা।
তার জোরাজুরিতে অপেরা থেকে বের হয়ে ঐ গুন্ডার কবলে পড়ে তার মা-বাবাকে মারা যেতে হয় বলে তাদের মৃত্যুর জন্যে নিজেকেই দায়ী করে ব্রুস।
মা-বাবার মৃত্যুর পর সে বেড়ে ওঠে দুর্বিনীত যুবক হিসেবে ভেতরে প্রচণ্ড ক্রোধ নিয়ে।
শৈশব প্রণয়ী র্যাচল ডসের দ্বারা প্রণোদিত হয়ে বিলিনেয়ার ব্রুস পারি
জমায় সুদূর এশিয়াতে, তার ব্যক্তিগত বিরোধের উর্ধে ন্যায়ের অনুসন্ধানে।
সেখানে সে যুদ্ধবিদ্যায় দিক্ষিত হয় তার মেন্টর হেনরি ডুকার্ড এবং রাস ‘আল গুল এর কাছে।
ডুকার্ড, লিগ অফ শ্যাডো নামের রহস্যময় সংঘের একজন সদস্য যে ব্রুস কে
শিক্ষা দেয় মার্শাল আর্ট এবং আর্ম-কম্ব্যাট এর নানা কৌশল সম্মন্ধে এবং
কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ নিজেকে নিয়ে যেতে অতিমানবিক সূক্ষ্মতার কাছাকাছি।
সাত বছর পর ব্রুস ফিরে আসে গথাম শহরে।
গথাম তখন কারমিন ফ্যালকনির অপরাধজগত।
ওইদিকে স্কেয়ার ক্রো ডঃ ক্রেইন এবং ওয়েইন সম্পর্কে পরিজ্ঞাত এক রহস্যময় তৃতীয় পক্ষ পরিকল্পনা করছে গথাম শহর নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার।
আর ইন্সপেক্টর জিম গর্ডন, এন্টারপ্রাইজের অ্যাপ্লাইড সাইন্স বিভাগের CEO
লুসিয়াস ফক্স এবং তার বিশ্বস্ত পরিচারক আলফ্রেড পেনিওর্তের সহযোগিতায়
ব্রুস চলেছে শহরটির হারিয়ে যাওয়া শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে।
ভয়কে জয় করে নিজেকে ব্যাটম্যানরুপে গড়ে তোলা ব্রুস কি পারবে এসব বন্ধ করতে ? নাকি গথামের দরকার ‘অ্যা হিরো উইথ ফেইস’ ?
আগেই বলেছি বব কেইনের ব্যাটম্যানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির পরিচালনায় ছিলেন ক্রিস্টোফার নোলান।
চিত্রনাট্য- ক্রিস্টোফার নোলান এবং ডেভিড এস. গয়্যার।
কাহিনী- ডেভিড এস. গয়্যার
সিনেমাটোগ্রাফি- ওয়ালী ফিস্টার।
অভিনয়ে ছিলেন…
ক্রিস্টিয়ান বেইল – ব্রুস ওয়েইন / ব্যাটম্যান
মাইকেল কেইন – আলফ্রেড পেনিওর্ত
লিয়াম নেসন – হেনরি ডুকার্ড
ক্যাটি হোমস – র্যাচেল ডস
গ্যারি ওল্ডম্যান – জিম গর্ডন
মরগান ফ্রিম্যান – লুসিয়াস ফক্স
সিলিয়ান মারফি – স্কেয়ার ক্রো / ডঃ ক্রেইন
টম উইলকিনসন – কারমিন ফ্যালকনি
চলচ্চিত্রটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, ক্যামেরা-ওয়ার্ক, স্পেসিয়াল
এফেক্টসগুলো ছিল অসাধারণ। চলচ্চিত্রটির প্রত্যেকটি দৃশ্য ওয়ালী ফিস্টার
ক্যামেরাবন্দী করেছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।
যার সম্মন্ধে বলা অপরিহার্য তিনি হলেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক,
ক্রিস্টোফার নোলান
একজন ব্রিটিশ আমেরিকান চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং প্রযোজক।
জন্মঃ ৩০শে জুলাই, ১৯৭০ (বয়স ৪৩) লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
ডাকনামঃ ক্রিস
পুর্ণ নামঃ ক্রিস্টোফার এডওয়ার্ড নোলান।
উচ্চতাঃ ৫ ‘১১” (১.৮০ মিটার)
স্ত্রী: এমা থমাস (১৯৯৭)।
আপকামিং মুভিঃ ইন্টারস্টেলার।
সহোদরঃ জনাথন নোলান, ম্যাথু ফ্রান্সিস নোলান।
তার বাবা ব্রেন্ডন নোলান আইরিশ বংশদ্ভুত ব্রিটিশ এবং মা ক্রিস্টিনা একজন
আমেরিকান। যার জন্যে তিনি দ্বৈত ব্রিটিশ এবং মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকারী।
১৯৮৯ এর দিকে কলেজে থাকতেই নোলান দুটি শর্টফিল্ম তৈরি করেন প্রথমটির নাম সারেয়াল এইট মিমি. এবং তারান্তেলা।
ব্রিটিশ পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান তখন সেই মাপের খ্যাতি অর্জন করেননি।
তবে খুবি অল্প বাজেটের চলচ্চিত্র ফলয়িং আর মেমেন্টো এবং ইনসমনিয়া দিয়ে
ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি চলচ্চিত্র জগত কাঁপিয়ে বিরাট কিছু করতে
এসেছেন।
২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়ার্নার ব্রস কর্তৃক ক্রিস নোলানকে দায়িত্ব দেওয়া হল “ব্যাটম্যান বিগিন্স ” পরিচালনা করার জন্যে।
দ্যি গার্ডিয়ান পত্রিকাতে লেখা হয়েছিল,
ব্যাটম্যান বিগিন্স পরিচালনার দায়িত্বভার নেয়ার লক্ষে হলিউড-কর্তাদের
কনভিন্স করতে নোলান মাত্র ১৫ মিনিট সময় নিয়ছিলেন। এ ব্যাপারে ওয়ার্নার
ব্রস প্রডাকশন প্রেসিডেন্ট গ্রেগ সিলভারম্যান বলেন, “নোলান কাহিনী দাড়
করাতে অনেক কম সময় নিয়েছিল বড়োজোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট, তবে তা ছিল অনেক
পরিপূর্ণ এবং তা সত্যিই ছিল ব্যাটম্যান বিগিন্স।”
ওয়ার্নার ব্রস প্রডাকশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেফ রবিনভ বলেন, “ক্রিস
এসে বলল ‘দেখুন, আমি চলচ্চিত্রের মধ্যে এই কাজগুলো করতে চাই, এবং দৃশ্যতও
আমি চলিচ্চত্রটি নিয়ে ‘তাই’ করতে চাই। আমার মনে করি চলচ্চিত্রটির ‘এই
পর্যন্ত’ যাওয়া উচিৎ। এবং আমার মনে হয়,
এটি হবে এমন একটি চলচ্চিত্র যা সকল সুপারহিরো-সিনেমা থেকে ব্যাতিক্রমধর্মী, যা আগে কেউ কখনও দেখেনি।’ ”
ব্যাটম্যানকে নিয়ে পরিচালনা করতে যেয়ে নোলান তার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করে
বলেন ব্যাটম্যান হচ্ছে বিশ্বের লুকায়িত বাস্তবতা। সমকালীন বাস্তবতার
পরিচয়রুপে একে আখ্যায়িত করা যায় এক অসাধারণ বীরত্বপূর্ণ চিত্রে। মনুষ্যত্ব
এবং বাস্তবতাই হবে তার চলচ্চিত্রের মূল ভিত্ত্যি।
নোলানের ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা ছিল ব্রুস এর বিশ্বভ্রমণ নিয়ে ড্যানি ও’নিল
এবং ডিক জিওর্দানোর লেখা ছোট উপাখ্যান, ব্যাটম্যান: এ ম্যান হু ফল্স।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিকে ব্রুসের কুয়ায় পড়ার ঘটনাটিও এ ম্যান হু ফল্স থেকে নেয়া।
পরে প্রকাশ করা হয় নোলান চেয়েছিলেন গথাম পুলিশ অফিসার জেমস গর্ডন হিসেবে
অভিনীত গ্যারি ওল্ডম্যানকে দিয়ে রাস ‘আল গুল চরিত্রটি করাতে। যা শেষ
পর্যন্ত লিয়াম নেসনকে দিয়ে করানো হয়েছিল।
১৯৮২ সালের কাল্ট সাইন্স ফিকশন ব্লেড রানার নামক কথাসাহিত্য নোলানের ব্যাটম্যার পরিচালনার অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
নোলান চেয়েছিলেন ব্যাটম্যানের ক্লকটি একধরনের ফ্লয়িং ক্লকের মত করতে।
কিন্তু হেমিং এর টিম তৈরি করেন নাইলনের তৈরি এবং ইলেকট্রস্ট্যাটিক
ফ্লকিংযুক্ত এক প্যারাশুট যা ব্রিটিশ পতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে শেয়ার করা
হয়েছিল। লন্ডন পুলিশ বাহিনী রাত দৃষ্টি সনাক্তকরণ হ্রাস করতে এটি ব্যবহার
করেছিল।
বুদ্ধিদিপ্তিক পরিচালনা এবং অসাধারন নির্দেশনায় ক্রিস্টোফার নোলান
ব্যাটম্যানকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য এক উচ্চতায়, যে উচ্চতায় অন্যকোনো সুপার
হিরো আদৌ উঠতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ ব্যাটম্যান বিগিন্স, দ্য ডার্ক নাইট, দ্য ডার্ক নাইট রাইজ্স, ইন্সেপসন, দ্য প্রেস্টিজ, ইন্সমনিয়া, মেমেন্টো এবং ফলয়িং।
এবার দ্য ডার্ক নাইট বেইলের কাছে,
ক্রিস্টিয়ান বেইল।
একজন ব্রিটিশ অভিনেতা।
জন্মঃ ৩০-শে জানুয়ারি ১৯৭৪ (বয়স ৩৯), হ্যাভারফর্ডওয়েস্ট, যুক্তরাজ্য।
ডাকনামঃ ক্রিস্টিয়ান
পুর্ণ নামঃক্রিস্টিয়ান চার্লস ফিলিপ বেইল।
উচ্চতাঃ ১.৮৩ মিটার
স্ত্রীঃ সিবি ব্লাযিক (২০০০)
বাবা-মাঃ ডেভিড গাঁট এবং জেনি জেমস।
আমার মতে অভিনেতাদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; প্রথমত ‘Some get better’
এবং দ্বিতীয়ত, ‘Some were born better’ ক্রিস্টিয়ানকে আমি ‘Born Better’
দলেই ফেলবো।
এই লোকটি বরাবরই আমাকে অবাক করেছে। যতবারই তার অভিনীত কোনো চলচ্চিত্র দেখেছি শুধু আশ্চর্য হয়েছি।
তার অভিনয় করার ধরনটাই অসাধারণ এবং তার অভিনয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ দিকটি
হলো এক একটি চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের ধরন একেক রকম; বডি মুভম্যান্ট, কথা
বলার স্টাইল মনোমুগ্ধকর। অস্কারবিজয়ী এই অভিনেতার অভিনয় জীবনের শুরু
‘অ্যানাস্তেসিয়াঃ দ্য মিস্টেরি অফ এনা’ নামক টেলিভিশন চলচ্চিত্র দিয়ে।
জে জি ব্যালার্ড রচিত ‘এম্পেয়ার অফ দ্য সানে’র উপর ভিত্তি করে তৈরি
স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘এম্পেয়ার অফ দ্য সান’-এ অসাধারণ
অভিনয় করে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ভালই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন কালজয়ী এই
অভিনেতা। ২০০০ সালে, ব্রেট ইস্টন এলিসের রচিত ‘আমেরিকান সাইকো’ থেকে
নির্মিত, মেরী হ্যারনের পরিচালিত চলিচ্চত্র আমেরিকান সাইকোতে প্যাট্রিক
বেইটম্যান নামক এক সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের কাছে
প্রশংসিত হন।
‘দ্য মেশিনিস্ট’ চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় ওজন কমিয়ে মাত্র ৫৫ কেজি করে
ট্রেভর রেজনিক চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি মেথড-অ্যাক্টর হিসেবে খ্যাতি
অর্জন করেন। ‘দ্য মেশিনিস্ট’ করার পর ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’-এর জন্যে নোলান
তাকে সময় দিয়েছিলেন মাত্র ৬ মাস। ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের সাহায্যে ৬ মাসেই
তিনি তার ওজন ৫৫ কেজি ১০০ কেজিতে নিয়ে যান। কিন্তু পরে খেয়াল হয়
চলচ্চিত্রটির জন্যে তার দরকার ৯০ কেজি। খুব অল্পসময়ে তিনি তার ওজন আরও ১০
কেজি কমিয়ে নেন।
ক্রিস্টিয়ান তার সর্বোচ্চ খ্যাতি অর্জন করেন নোলান পরিচালিত ব্যাটম্যান
বিগিন্স, দ্য ডার্ক নাইট, দ্য ডার্ক নাইট রাইজেসে ব্রুস ওয়েইন চরিত্রে
অভিনয় করে। ২০১০ সালে ডেভিড ও. রাসেল পরিচালিত ‘দ্য ফাইটার’ চলচ্চিত্রে
অসাধারণ অভিনয় করে জিতে নেন অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব ও স্ক্রিন এক্টরস
গিল্ডের সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার।
‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’ চলচ্চিত্রের টেস্টিং প্রসেসের সময় ব্যাটম্যানের
চরিত্র প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নোলান ক্রিস্টিয়ান বেইলকে কেন্দ্র করে বলেন,
“স্ক্রিনটেস্টের পূর্বেই ক্রিস্টিয়ান কোনোভাবে বুঝে ফেলেছিল এই চরিত্রটি
পরিপূরণও করতে অভিনয় ক্ষমতা নয়, একে ফুটিয়ে তুলতে হবে নিজের ভেতরকার
অসাধারণ আইকন-গ্রাফি দিয়ে। এখানে সাধারণ পারফরম্যান্স বা স্বাভাবিক
কর্মক্ষমতা দিয়ে হবেনা এর জন্যে দরকার বিপুল পরিমাণ কর্মশক্তি।”
ব্যাটম্যানের স্বর সম্পর্কে নোলান বলেন- “ক্রিস্টিয়ানের কণ্ঠস্বর
স্ক্রিনটেস্টেই এক গভীর আবেগ এবং একধরনের প্রভাব সৃষ্টি করে। সেই ঠিক করে
ব্যাটম্যান এর স্বর হবে ব্রুস ওয়েইন থেকে ভিন্ন এবং এর পিছনে ছোটখাটো
যুক্তি দাড় করায় কেন ব্যাটম্যান এর স্বর হবে ব্রুস ওয়েইন থেকে ভিন্ন।”
ছবিটির চিত্রনাট্যকার ডেভিড এস. গয়ার বলেন “কিছু অভিনেতা হয়তো শুধু
ব্রুস ওয়েইন চরিত্র অথবা শুধু ব্যাটম্যান চরিত্র অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতে
পারবে কিন্তু বেইল একই সাথে ব্যাটম্যান ও ব্রুস ওয়েইন – এদের দুজনের
ব্যক্তিত্বের ভিন্যতা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে।”
বেইল নিজে ব্রুস ওয়েইন চরিত্রের চারটি রূপ বা পার্সোনার বর্ণনা দিয়েছেন –
এক, ব্যাটম্যান চরিত্র; দুই, প্রতিহিংসাপরায়ণ যুবক; তিন, কাণ্ডজ্ঞানহীন
ফুর্তিবাজ ব্রুস; চার, ক্রুদ্ধ ব্রুস যে তার জীবনের উদ্দেশ্য আবিস্কার করে
চলেছে।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ ব্যাটম্যান বিগিন্স, দ্য ডার্ক নাইট, দ্য
ডার্ক নাইট রাইজ্স, দ্য প্রেস্টিজ, দ্য ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার, দ্য ফাইটার,
পাবলিক এনিমিস, টারমিন্যাটার স্যালেভ্যাশন, রেস্কিউ ডাওন, র্যেইন অফ
ফায়ার, আমেরিকান সাইকো, ইকুইলিব্রিয়াম এবং হার্শ টাইম্স।
No comments:
Post a Comment